স্বাধীনতার চলি্লশ বছর পর আমরা দেশকে নিয়ে কেমন স্বপ্ন দেখি এমন প্রশ্ন করা হলে আমি বলব, পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই আমাদের। বর্তমানে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ আর অফুরন্ত সম্ভাবনার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে সঠিক গন্তব্যে। আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি লাখো মুক্তিপ্রাণ অকুতোভয় বীর বাঙালির রক্তের বিনিময়ে। এ দেশের মুক্তিপাগল মানুষ বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশকে আমরা নিজের মতো করে গড়ে তুলব। সেসব বীর সেনানীদের দেখানো স্বপ্নের পথে চলতে গিয়েই হয়তো আমারও স্বপ্ন দেশকে নিয়ে, নিজের মাতৃভূমিকে নিয়ে। আর এ থেকেই দেশকে নিয়ে নানান ভাবনা আমার মনে স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। দেশকে মায়ের মতোই ভালোবাসি বলে আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি নতুন এক বাংলাদেশের, নতুন এক লাল-সবুজের দেশের। এমন স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত জাতি আর পরিশ্রম। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, যে জাতি বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত উন্নত। তাহলে বাংলাদেশের বিশাল মানবসম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য পরিশ্রমের কোনো বিকল্প কী আছে? এজন্য প্রয়োজন একটি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ও পরিশ্রমী জাতির। আর এর ফলে দেশ এগিয়ে যাবে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে। দুরুহ এই কাজের দায়িত্ব নিতে হবে আজকের তরুণদেরকেই। আলোর পথের কা-ারি হয়ে ঘুণেধরা সমাজকে আলোকিত করতে যে কোনো বাধার প্রাচীর অতিক্রম করে চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে পেঁৗছতে হবে। দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করারও দৃঢ় শপথ নিতে হবে তাদের। তরুণরাই আবর্জনার স্তূপ থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্তি দেবে এমনটিই বিশ্বাস সবার।
বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক সমস্যায় নিমজ্জিত। এসব সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করে ভবিষ্যতের পথে হাঁটতে হবে। তরুণদের মেধা ও প্রতিভাকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে এগিয়ে আসবে। তরুণ সমাজের যখন ভিশন থাকবে, তরুণ সমাজ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার ভাগ্য গড়ার জন্য একসঙ্গে কাজ করে তখনই একটি জাতির উন্নয়ন সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। অতীতে যেসব শিক্ষার্থী ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল নিয়ে পাস করেছেন আজ তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মদক্ষতার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখছেন। এসব তরুণ মেধাবী প্রকৌশলীরা সত্যিই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। তাদের দেখে আমার মতো অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছে।
বর্তমানে এ বিষয়ের জ্ঞান ম্যানুফ্যাকচারিং, হসপিটাল, কনসাল্টিং, ফার্ম, সেলস, যোগাযোগ ব্যবসায় ইত্যাদি সেক্টরে প্রয়োগ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সব ধরনের শিল্প-কারখানায় এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সাফল্যজনকভাবেই প্রসারিত হচ্ছে। আগের চেয়ে বর্তমানে ভালো কিছু করা যায় এটি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এ বিভাগে অধ্যয়নরত প্রতিটি শিক্ষার্থী। বিশেষ করে শিল্পকারখানায় প্রোডাকশন কন্ট্রোলার, কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার, সেফটি ম্যানেজার, ফ্যাসিলিটি ডিজাইনার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার ও লজিস্টিকস সাপোর্ট ম্যানেজার ইত্যাদি পদে অধিক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। দিন দিন তাদের সফলতা প্রতিষ্ঠান ও দেশের জন্য লাভজনক ভূমিকা রাখছে। সবাই যদি আমাদের অবস্থান থেকে মনোযোগ সহকারে একাগ্রতার সঙ্গে, মিলেমিশে কাজ করি তবেই নতুন স্বপ্নময় একটি সাজানো দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। আর এজন্য সবাইকে কর্মক্ষেত্রে নিজের কাজ মনে করে কাজ সম্পাদন করতে হবে এবং সুন্দর দেশ গড়ার অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। দেশের সবাইকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আরো দক্ষতা অর্জন ও পরিশ্রমী হওয়ার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ফলে ব্যক্তি পর্যায়ের উন্নতির পাশাপাশি দেশও এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। প্রত্যেকেই যদি আমাদের অবস্থান থেকে দেশের কথা ভাবি, দেশের জন্য কিছু করতে চাই তবেই দেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে। দেশের কল্যাণের জন্য সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশের তরে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। প্রথমে নিজেকে গড়ি এবং দেশকে গড়ি এমন সস্নোগানে সবাই এগিয়ে এলেই সম্ভব নতুন এক বাংলাদেশ গড়া। লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এ লাল সবুজের বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে আরো মেলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। তাহলেই হয়তো শহীদদের আত্মত্যাগ সফল হবে। নতুন বাংলাদেশকে পরিচিত করার দায়িত্ব হোক তরুণ প্রজন্মের সবার_ এমনটি প্রত্যাশা আমার।
মো. জাহিদুল ইসলাম
চতুর্থ বর্ষ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট