বাংলাদেশে গত দুই দশকে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৈপ্লবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯১ সালে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মধ্যবিত্ত থেকে ২০১২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ড. বিনায়ক সেন। এ হিসাবে বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ৫ কোটির উপরে যাদের আয় বাংলাদেশের আয়ের হিসাবে দৈনিক ২ ডলার থেকে ১৩ ডলার। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিচারে গত দুই দশকে অর্থনৈতিক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ হলেও সাংস্কৃতিক মধ্যবিত্তের বিকাশ হয়নি। এ কারণে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের উন্নয়ন হয়নি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা সরকারি হিসাবে প্রায় ১৬ কোটি। জনসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৭তম বৃহত্তম দেশ। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিশাল মধ্যবিত্তের জন্য সুযোগ কম রাখা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তার মতে গত দুই বছরে মধ্যবিত্তের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেণী শেয়ারবাজারে বড় ধরণের আঘাত পেয়েছে। দুই ডিজিটের মূল্যস্ফীতির চাপে পড়তে হয়েছে। সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকির বেশিরভাগ অংশটাই বহন করেছে এ মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তার ওপর সারাদেশে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি -বেসরকারি সকল ধরণের পরিবহণের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি ও এপার্টমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকায় জমির মূল্য ওয়াশিংটন বা নিউইয়র্ক শহরের জমির মূল্যের চেয়ে বেশি। তার মতে উঠতি এ মধ্যবিত্ত শ্রেণী বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে। এমনকি প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের সঞ্চয়ের উপরেও উৎসে কর কেটে রাখা হয়েছে। এই বাড়ি ভাড়া ও জমির মূল্য বৃদ্ধি কমানোর জন্য সরকারের একটি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন করা প্রয়োজন রয়েছে। তার মতে, মধ্যবিত্ত শ্রেণী সরকারের নির্বাচনের মতামত তৈরী করে। এ শ্রেণী আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হবে বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটেছে। দেশে আভ্যন্তরীণ বাজারের সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে জিডিপির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তাতে মধ্যবিত্তের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তের উপরে করের বোঝা চাপানো হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎসে কর কেটে রাখা হয়েছে এটি সত্য। কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে তিনি কর্তন করা আয় ফেরত নিয়ে যেতে পারেন। বাজেটে রফতানির ওপরে উৎসে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে আমদানিকারক ও রফতানিকারকের মধ্যে বৈষম্য কমানোর জন্য। কর দেয়ার ক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করেছি। এতে কোন শ্রেণী মনোকষ্টে পড়বে বলে মনে হয় না।
অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেছেন, মধ্যবিত্তদের জন্য দৃশ্যমান কোন কিছু দেখানো যায়নি। তবে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের দুর্ভোগ লাঘবে ঢাকায় দুটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর একটি মেট্রোরেল প্রকল্প আগামী জুন মাসে শুরু হবে। অন্যটি এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্প্রসারণ করা হয়েছে।