বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করতে চান অনন্যা

নাসার সফল গবেষণা শেষে নিউক্লিয়ার গবেষণা করতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের বিস্ময় তরুণী তনিমা তাসনিম অনন্যা জানালেন মহাকাশ বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তিতেও বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করার লক্ষ্য তার। সমপ্রতি বাংলাদেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে তিনি ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সিইআরএন)-এ গবেষণার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার গবেষণার বিষয় হিগস-বসন নামের এলিমেন্টারি পার্টিকল-এর শনাক্তকরণ। গত ১৬ জুন ইউরোপের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন অনন্যা। অক্টোবরে দেশে ফিরে তার গবেষণার বিষয়ে জাতিকে অবহিত করবেন তিনি।  
তনিমা তাসনিম অনন্যা বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম—আমি মহাকাশ নিয়ে কাজ করছি। কী আছে মহাকাশে তা নিয়ে আমি সবসময়ই ভাবতাম। আমার ভাবনা কখনও কারও 
সঙ্গে শেয়ার করতাম না। মনে মনে ভাবনাটাকে লালন করতাম। মাঝে মাঝে ভাবতাম আমার ভাবনা কি সত্যি সত্যিই বাস্তব রূপ পাবে? এ রকম ভাবনা থেকেই আমি ফিজিক্স ও অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে আমেরিকাতে পড়ালেখা করেছি। এভাবেই শুরু হয় স্বপ্নাভিমুখে অনন্যার যাত্রা। সে যাত্রা যেমন বন্ধুর তেমনি রোমাঞ্চকরও বটে। 
অনন্যার জন্ম নরসিংদীতে। স্কুলে যেতে না যেতেই হঠাত্ একদিন টেলিভিশনে দেখলেন মঙ্গল গ্রহের ওপর একটি প্রতিবেদন। তখন থেকেই মাথায় ঢুকে যায় মহাকাশের চিন্তা। কীভাবে এতকিছু সৃষ্টি হল। কী আছে মহাশূন্যে? এসব ভাবতে ভাবতে অনেক সময় চলে যেত। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর পাননি। তখন থেকেই অনন্যা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার। স্বপ্ন পূরণের আশায় কলেজ জীবন পার করে ২০০৯ সালে চলে যান আমেরিকায়। ব্রায়ান মার কলেজে দুই বছরের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হন ফিজিক্স ও অ্যাস্ট্রোনমির ওপর। এখন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে এক বছরের একটি কোর্স করছেন। এটি শেষ করে আবার আগের কলেজে চলে যাবেন আমেরিকার পেনসিলভেনিয়াতে ব্রায়ান মার কলেজে। অনন্যা চান নাসায় কাজ করতে। গত সামারে নাসা থেকে ৩ মাসের একটি ইন্টার্নশিপ করেছেন। এরপর তার লক্ষ্য পড়াশোনা শেষ করে নাসায় যোগ দেওয়া।
কীভাবে নাসা থেকে ডাক এল এ প্রশ্নের জবাবে অনন্যা জানান, বিগত পরীক্ষার ফলাফলসহ একটি রচনা লিখতে হয় এক হাজার শব্দের মধ্যে। কেন আমি নাসায় ইন্টার্নশিপ করতে চাই এবং এতে তাদের কী লাভ হবে—এর ওপর। এই রচনার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তারা আমাকে ডাকে। অনন্যা বাংলাদেশের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ও এবং এ লেবেল পাস করে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান আমেরিকার ব্রায়ান মার কলেজে। কলেজ জীবনে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার খোঁজ খবর নিজে নিজেই নেন। ৩ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে অনন্যা বড়। মা শামীম আরও জানান, মহাকাশ নিয়ে পড়ার ইচ্ছাতে তিনি কখনও বাধা দেননি বা একা বিদেশ যেতেও বাধা দেননি। তিনি চান তার মেয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক। বাবা এমএ কাইয়ুম মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা জুগিয়ে চলতে চান। অনন্যা জানান, একদম প্রথম অবস্থায় নতুন পরিবেশে গিয়ে একটু একটু খারাপ লাগত। কিন্তু কিছুদিন পরই তা ঠিক হয়ে যায়। এরপর পড়াশোনার চাপে মনও খারাপ হতো না। আমি নিজেই নিজের সব কাজ করি। তাতে পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হয়নি।