জ্বালানি সংকট কাটিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারলে নতুন অর্থবছরে সরকারের প্রত্যাশা অনুযায়ী ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলেই মনে করে বিশ্বব্যাংক।
বুধবার ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংক কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “এ লক্ষ্য অর্জনে দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। চ্যালেঞ্জ দুটি হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসন এবং অবকাঠামো- বিশেষ করে সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন।”
তিনি বলেন, “৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব নয়, তবে কষ্টকর, চ্যালেঞ্জিং হবে।”
লিখিত বক্তব্যে বিশ্ব ব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এ বছর যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগামী বছর তার উন্নতি হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার যে রেশ ছিল তাও আগামী বছর কেটে যাবে বলে আশা করা যায়।
“ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার প্রবৃদ্ধি বড়বে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থ বছরে বাংলাদেশেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে”, বলেন জাহিদ হাসান।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক আগামী বছর দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে বলা হয়েছে।
গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
২০১৪-১৫ অর্থবছর নাগাদ এই হার ৮ শতাংশে উন্নীত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিদায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাব ধরে জিডিপির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
‘প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো’
জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে বিবিএস যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক হলে প্রশংসনীয় হবে। বর্তমান আন্তর্জাতিক পেক্ষাপটে এই প্রবৃদ্ধি ‘খুবই ভাল’ বলা যায়।
“এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল,” বলেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী
দুই মাস ধরে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে দুই মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমছে। দুই অংকের ঘর থেকে এখন তা এক অংকের ঘরে নেমে এসেছে। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত- দুই ধরনের মূল্যস্ফীতিই কমছে।”
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে, কমছে সঞ্চয়
জাহিদ হোসেন জানান, বিদায়ী অর্থবছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ১৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। জাতীয় সঞ্চয়ের হারও কমেছে। ২৬ শতাংশ থেকে তা কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
এই সময়ে আমানতের হারও কম। বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমানতের হার দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল ২২ দশমিক ৮ শতাংশ।
শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রবাহ কমেছে বলেও জানান জাহিদ হোসেন।
বিনিময় হার ও রিজার্ভ স্থিতিশীল
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাহিদ হোসেন বলেন, “প্রশ্ন হচ্ছে- কতোদিন এটা ধরে রাখা সম্ভব হবে”
অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বিদেশি ঋণ-সহায়তার প্রবাহ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এখন ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আর চার মাস ধরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ৮১ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৮২ টাকার মধ্যে রয়েছে।
বিশাল ভর্তুকি
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিছু সাহসী পদক্ষেপের পরও (জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি) বিদায়ী বছরে বিশাল অংকের ভর্তুকি গুণতে হয়েছে সরকারকে।
২০১০-১১ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে তা বেড়ে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াবে। আর এ ভর্তুকির অর্ধেকই যাবে জ্বালানি তেল খাতে।