উপদেষ্টার চিঠিতে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন

চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান সুপার গ্র“প অব কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এলিট প্রপার্টিজ ম্যানেজমেন্টের প্রায় ২০ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের এক চিঠির মাধ্যমে কর ফাঁকির এ বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয়েছে।
উপদেষ্টা তার চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে জানান, কর ফাঁকির বিষয়ে বেনামি একটি চিঠি আমার কাছে এসেছে। সেখানে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা যাচাই করে দেখা হউক। বেনামি চিঠিতে বলা হয়েছে, এলিট প্রপার্টিজের মালিক সেলিম আহমেদ চট্টগ্রামে ১২ কাঠার জায়গায় ৯তলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। বিল্ডিংয়ে মোট ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৩২টি। বিল্ডিং নির্মাণে ২০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির নামে কোনো ব্যাংক ঋণ নেই। ১৫টি ফ্ল্যাট বাবদ ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন, তা ব্যাংক হিসাবে প্রদর্শন করেননি। চট্টগ্রামের খুলশিতে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম ৮ হাজার টাকা। প্রতিটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে ১ কোটি টাকা করে।

উল্লেখ্য, সুপার গ্র“পের অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান সুপার রিফাইনারির কর ও ভ্যাট ফাঁকি বাবদ এনবিআরের আগে ৩৫ কোটি টাকা আদায় করেছে। প্রতিষ্ঠানের চাকরিচ্যুত এক ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে লিখিত অভিযোগে কর ফাঁকির এসব তথ্য ফাঁস করে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে সুপার গ্র“পের এ বিপুল পরিমাণ কর ও ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে ভ্যাট ও আয়কর কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে এমন সন্দেহ করছে দুদক। গতকাল মঙ্গলবার দুদক চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার ও আয়করের জোন-২ এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়ে তদন্ত করছে দুদকের একটি দল। সুপার গ্র“পের রিফাইনারির কর ফাঁকির বিষয়ে রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটি আয়কর রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিয়ে গোপন করেছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকার উৎপাদন ও আয়। ব্যাংকের হিসাব বিবরণী সংগ্রহ করে পাওয়া যায় শত শত কোটি টাকার গোপন লেনদেন। একাধিক ব্যাংকে আরও অর্ধশত কোটি টাকার এফডিআর। এভাবে কোম্পানির প্রকৃত আয়, উৎপাদন সবকিছু প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে গোপন করে সরকারকে প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভুয়া তথ্যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্মের অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে বিশাল অঙ্কের কর ফাঁকি হয়েছে। এভাবে আয়কর রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, উৎপাদন গোপন করে ভ্যাট কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে নজিরবিহীন কায়দায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকরা সরকারের কোষাগারে রাজস্ব জমা না দিয়ে একদিকে তা আত্মসাৎ করেছে, অপরদিকে অবৈধ অর্থে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়, সুপার রিফাইনারি লিমিটেড তদন্তকালীন ৫ অর্থবছরে প্রায় ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ভ্যাট এবং ৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। এজন্য জাল বা ভুয়া মূসক-১১ চালান ব্যবহার করে কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বাজারে সরবরাহ করা হলেও তা ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন রাখা হয়েছে। আয়কর আইন অনুযায়ী অপ্রদর্শিত ব্যবসায়িক আয় পাওয়া গেলে তা গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ এবং সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে।