যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ:ড্যান ডব্লিউ মজীনা

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার জন্ম পশ্চিমাঞ্চলীয় আইওয়া রাজ্যে। আইওয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস এবং পরে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে জনপ্রশাসন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক মজীনা এর আগে (১৯৯৮ থেকে ২০০১) বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের হয়ে ইসলামাবাদ, কিনশাসা ও নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যাঙ্গোলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে। সম্প্রতি তিনি অতিথি হিসেবে প্রথম আলো কার্যালয়ে এলে তাঁর এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল কাইয়ুম এবং এ কে এম জাকারিয়া

প্রথম আলো  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করে গেছেন। এই সফরের ফলাফলকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড্যান ডব্লিউ মজীনা  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর পুরোপুরি সফল হয়েছে। এই সফরের ফলাফলে আমি সন্তুষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের যে অংশীদারি রয়েছে, তার স্বীকৃতি হিসেবেই তিনি বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। আর দুই দেশের এই অংশীদারি খুব গভীর, সমৃদ্ধ ও ব্যাপক। যে ক্ষেত্রগুলোতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে, তার আওতা যথেষ্ট ব্যাপক। মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করার উদ্যোগ থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, নিরাপত্তা ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা—সব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামার বিশেষ কর্মসূচি ‘ফিড দ্য ফিউচার’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, জনগণের খাদ্য কেনার ক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য মায়েদের যথাযথভাবে খাদ্য প্রস্তুত করার মতো বিষয় এতে রয়েছে। এর বাইরেও পরিবার পরিকল্পনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মানবিক সহায়তা ও সর্বোপরি বাংলাদেশের গণতন্ত্র—সব বিষয়েই যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও সমর্থন রয়েছে। এসব সহযোগিতা ও অংশীদারির বিষয়গুলো আরও জোরদার করার লক্ষ্যে এবং একে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই হিলারির এই সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়টিই তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী না-ও থাকতে পারি, অন্য কেউ আসবেন। কিন্তু দুটি দেশের মধ্যে এই যে সহযোগিতা ও অংশীদারির সম্পর্ক, তা যেন কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কে প্রধানমন্ত্রী এর ওপর নির্ভরশীল না থাকে। বিষয়টি এর চেয়ে ব্যাপক।’
প্রথম আলো  এবারের সফরে নতুন কী হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
ড্যান মজীনা  অনেক কিছুই নতুন হয়েছে বলে আমি মনে করি। তাঁর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার অংশীদারির বিষয়টি আরও জোরদার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তিনি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে একটি অংশীদারি সংলাপ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এটা একটা নতুন বিষয়, এ ধরনের চুক্তি আগে হয়নি। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে বছরে একবার কৌশলগত বিষয় নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। দুই দেশের অংশীদারির বিষয়টি সঠিক পথে চলছে কি না বা আমরা দুই দেশ যেভাবে চাই সেভাবে চলছে কি না, তা এর মধ্য দিয়ে যাচাই ও মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে। এই অংশীদারি সংলাপ চুক্তির বিষয়টি তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কারণেই বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে-পরে ওয়াশিংটনে এই অংশীদারি সংলাপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে জলবায়ু মোকাবিলা তহবিলে সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটা নতুন, আমরা আগে কখনো তা করিনি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিন কোটি ডলারের সাহায্য। এ ছাড়া টিকফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আলোচনা হয়েছে। আশা করি, এ বিষয়েরও দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
প্রথম আলো  যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কশূন্য করা হোক—এটা বাংলাদেশের একটি বড় চাওয়া। বাংলাদেশের এই প্রত্যাশা পূরণের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
ড্যান মজীনা  আমি বিষয়টি টিকফা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চাই। আমরা জানি যে টিকফা হচ্ছে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি। এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার অর্থ হচ্ছে, দুই দেশ প্রতিবছর ছয় মাসে অন্তত একবার আলোচনায় মিলিত হতে পারে এবং সেখানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত যেকোনো ক্ষেত্রের সমস্যা চিহ্নিত করার সুযোগ ও পরিস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হতে পারে যে, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটা যৌক্তিক একটি অবস্থান। এখন আমরা মনে করি, টিকফা চুক্তি হলে দুই দেশ একটি কাউন্সিল গঠন করতে পারবে এবং এটা এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য কার্যকর একটি ফোরাম হতে পারে। সেখানে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হলে তা দূর করার পথও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এরপর এ নিয়ে কংগ্রেসে আলোচনা বা এ-সংক্রান্ত বিল আনার ব্যাপারেও এগোনো সম্ভব হবে। এ জন্যই আমরা চাই টিকফা চুক্তিটি দ্রুত স্বাক্ষর করতে। তাতে অনেক সমস্যা সমাধানের পথ সহজ হয়ে আসবে।
প্রথম আলো  যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার পূর্বশর্ত কি টিকফা চুক্তি?
ড্যান মজীনা  না, এটা কোনো পূর্বশর্ত নয়। কিন্তু আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে টিকফা সাহায্য করবে। শূন্যশুল্ক দেওয়ার বিষয়টি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এটা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পেতে হবে। এখন বাংলাদেশের যে অবস্থান বা চাওয়া, তা জানানোর বিভিন্নভাবে চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ যদি টিকফা চুক্তিতে সই করে, তবে এটা একটা ইতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ যদি আমিনুল ইসলামের নিখোঁজ হওয়া বা তাঁর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কার্যকর তদন্ত শুরু করে, সেটাও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথম আলো  অনেকে মনে করেন, টিকফার মাধ্যমে এ অঞ্চলে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের বিস্তার ঘটবে এবং অন্যদিকে এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ড্যান মজীনা  আমি শুনিনি যে কেউ এ ধরনের যুক্তি দিয়েছে। তবে কেউ যদি তা করে থাকে, তবে তাদের উচিত এই চুক্তি পড়ে দেখা। এটা খুবই সংক্ষিপ্ত একটি খসড়া, কয়েক পাতার। এতে একটাই বিষয় রয়েছে আর তা হচ্ছে, একটি ফোরাম গঠন করা। আপনি এটাকে কাউন্সিলও বলতে পারেন। চুক্তি হলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ ধরনের একটি কাউন্সিল গঠিত হবে। তারা হয়তো বছরে একবার মিলিত হবে। তারা কী করবে? দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে, তা চিহ্নিত করবে এবং কীভাবে তা সর্বোত্তম উপায়ে দূর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবে।
প্রথম আলো  আপনি বলতে চাইছেন, এটা শুধু বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়। এর বাইরে আর কিছুই নেই?
ড্যান মজীনা  হ্যাঁ, এটা শুধুই বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত একটি চুক্তি।
প্রথম আলো  বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ শুধু জ্বালানি খাতে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে সমস্যা কোথায়?
ড্যান মজীনা  আমাদের বুঝতে হবে যে বিনিয়োগ কীভাবে আকৃষ্ট হয় এবং কীভাবে হয় না। একজন ভালো বিনিয়োগকারী বা যেকোনো বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করার আগে দেখবে যে তা সফল হবে কি না। কোনো সরকার বললেই একজন বিনিয়োগকারী কোনো দেশে বিনিয়োগ করবে না। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অনেক খাতেই বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন, যদি তাঁরা নিশ্চিত হন যে তাঁদের বিনিয়োগ সফল হতে পারে। সেদিন আমি অনাবাসী বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ-পরিস্থিতি উন্নত করার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। এ জন্য বিনিয়োগ-পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করতে হবে, দুর্নীতি কামাতে হবে, সুশাসনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। এগুলো সবাই জানে, কোনো গোপন বিষয় নয়।
প্রথম আলো  বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?
ড্যান মজীনা  আমরা মনে করি, গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচার হওয়া প্রয়োজন। আর এই বিচার হওয়া উচিত স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায়। এবং বিচার-প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। আমরা খুবই খুশি যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ স্টিভেন র‌্যাপ এরই মধ্যে তিনবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধের বিচারের মান নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে।
প্রথম আলো  গ্রামীণ ব্যাংক ও অধ্যাপক ইউনুস ইস্যুটি সব মহলে আলোচিত হচ্ছে, কীভাবে এর সমাধান হতে পারে?
ড্যান মজীনা  আমি বাংলাদেশে এর আগেও কর্মরত ছিলাম। তখন আমি যে কতবার গ্রামীণ ব্যাংক ও এর নানা কর্মসূচি পরিদর্শনে গিয়েছি, তা হিসাব করে বলা কঠিন। এখন আমি ছয় মাস ধরে এখানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, এর মধ্যে আমি চারবার ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়েছি। গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই উঁচু। আমার এখানে কেউ এলেও আমি তাদের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিদর্শনে নিয়ে যাই। কারণ আমি দেখাতে চাই যে বাংলাদেশিরা নিজেরাই নিজেদের উন্নতির চেষ্টা করছে। জীবন ও মানুষের উন্নয়ন সম্পর্কে গ্রামীণের যে দর্শন, তাকে খুবই পছন্দ করি। গ্রামীণ শুধু ক্ষুদ্রঋণের বিষয় নয়, এটা এর চেয়ে বড় কিছু। এটা একধরনের জীবনপদ্ধতি, একধরনের আশা-জাগানিয়া বিষয়, এটা নিজের দায়িত্ব নিজে গ্রহণের একটা ধারণা। এ ধরনের একটা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকুক এবং কাজ করে যাক, এটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা। কারণ ৮৪ লাখের বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখই নারী, তাদের ক্ষমতায়নে গ্রামীণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। ফলে আমরা চাই যে এই প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে টিকে থাকুক। এটার যে নিজস্ব কাঠামো ও অনন্য পরিচালনা-পদ্ধতি রয়েছে, তা অব্যাহত থাকুক। আপনারা সবাই জানেন যে এই ব্যাংকটি ১২ সদস্যের একটি পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যার মধ্যে নয়জনই ঋণগ্রহীতাদের পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচিত হয়ে থাকেন। একই কাঠামো মেনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে।
প্রথম আলো  গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে, সে ব্যাপারে সরকারের তরফে কী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে?
ড্যান মজীনা  প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিবসহ সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যকরভাবে টিকে থাকার প্রয়োজন রয়েছে। এটা উৎসাহব্যঞ্জক।
প্রথম আলো  বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ড্যান মজীনা  আমি মনে করি যে গণতন্ত্রই বাংলাদেশের একমাত্র পথ। গণতন্ত্র বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক শাসনের যে কিছু সময় গেছে, তা দেশটির জন্য খুব সুখকর কিছু ছিল না। আমি আশাবাদী ও নিশ্চিত যে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথেই থাকবে। এবং মাত্র ৪১ বছর বয়সী এই দেশটির বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সামনের দিনগুলোতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর এই গণতন্ত্রকে আরও জোরদার ও শক্তিশালী করতে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই; এবং এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নির্ধারণ করার জন্য দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। আমি আশা করি, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে বিলম্ব না করে শিগগিরই একটি সমঝোতায় আসবে। দেশের স্বার্থেই তা করতে হবে। আপনারা জানেন যে তৈরি পোশাক খাতের অনেক কাজ এখন চীন থেকে বাংলাদেশমুখী হচ্ছে, কারণ সেখানে তা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের সামনে এখন অনেক সম্ভাবনা। কিন্তু বিনিয়োগকারী, ক্রেতা বা উৎপাদক গোষ্ঠী যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে তা হচ্ছে, অনিশ্চয়তা। বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে অনিশ্চয়তা। এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সব ধরনের অনিশ্চয়তা কটিয়ে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
প্রথম আলো  আপনি এর আগেও বাংলাদেশে ছিলেন। এখন আবার বাংলাদেশে এসে কী ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়ল?
ড্যান মজীনা  বাংলাদেশে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। বেবিট্যাক্সির পরিবর্তে সিএনজি স্কুটার এসেছে, পলিথিন নিষিদ্ধ হয়েছে। আগের বেবিট্যাক্সির ধোঁয়ার কথা আমি এখন মনে করতে পারি। এতে পরিবেশ ভালো হয়েছে, আগের তুলনায় অনেক পরিষ্কার হয়েছে। তবে ট্রাফিক-পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি মনে করি তা হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তন। গত ১০ বছরে আমি তা দেখেছি। বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। ওয়াশিংটন এখন বাংলাদেশকে কৌশলগত অবস্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। একটি নমনীয়, সহনশীল, সেক্যুলার, গণতান্ত্রিক এবং সহিংস সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
ড্যান মজীনা  ধন্যবাদ।