শিল্প-বাণিজ্য ডেস্ক
যশোর সদরের সুজলপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা রানী (আসল নাম নয়) চাকরির প্রলোভনে ভারতে পাচার হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন। সেখানকার নরকপুরী থেকে রক্ষা পেলেও নিজ দেশের মাটিতে অপমান-অপবাদ আর লাঞ্ছনা সইতে হচ্ছে তাকে। বিধবা মায়ের সংসারে ৩ ভাইবোনের মধ্যে রানী সবার বড়। তবে তিনি এখন নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন। শুধু রানী নয়, শত শত মহিলা, কিশোরী, যুবতী নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। ভারতে পাচার থেকে উদ্ধার হওয়া এমন অনেকেই বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়েছেন। তারা সবাই যশোর জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আওতায় দর্জি, বাটিক ও বিউটিফিকেশনসহ হাঁস-মুরগি পালন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। শুধু তারা নন, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর শত শত দরিদ্র তরুণী-মহিলাদের স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে চলেছে। বাসস।
গত বছর জুলাই থেকে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আওতায় চালু করা হয়েছে দুস্থ কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার প্রকল্প। যশোর পৌরসভার ৯০০ মহিলাকে আনা হয়েছে এ সুবিধার আওতায়। প্রতি মাসে ৩৫০ টাকা করে বছরে ৪ হাজার ২০০ টাকা দেওয়া হবে ল্যাকটেটিং মাদারদের। যশোর জেলার ১৪ হাজার ৫২৫ জন দুস্থ মহিলাকে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উদ্যোগে ভিজিডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে যশোরের ১৫টি ইউনিয়নের ১ হাজার ১২০ জন ভিজিডির আওতায় সহায়তা পাচ্ছেন। প্রতিজন ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মহিলাকে ৩০ কেজি গম এবং গমের পরিবর্তে ২৩ কেজি ৭০০ গ্রাম চাল দেওয়া হয়। তা ছাড়া তাদের মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উদ্যোগে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি) দেওয়া হয় বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে। পাশাপাশি এইচআইভি, দুর্যোগ ও কয়েকটি কর্ম দক্ষতা বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালা করা হয় তাদেরকে নিয়ে।
যশোর জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজের আওতায় তারা এসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬১৪ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন চাল ও গম বরাদ্দ এসেছে দুস্থ ভিজিডি কার্ডধারীদের মধ্যে বিতরণের জন্য। এরই মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯ দশমিক ৯৭৬ মেট্রিক টন চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে। অর্থনৈতিকভাবে তাদের স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় ২ শতাধিক দুস্থ মেয়েকে সেলাই ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২টি সমিতির আওতায় ২০ হাজার টাকা হস্তশিল্পের কাঁচামালের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে। সপ্তাহের ৩ দিন করে ৪টি ব্যাচের মাধ্যমে এ হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিদিন ২০ টাকা করে যাতায়াত বাবদ দেওয়া হয়েছে ট্রেনিং নেওয়া প্রশিক্ষণার্থীদের। যশোরের ১৫টি ইউনিয়নের ২৭০ জন মহিলাকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হয় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে। এর মধ্যে ২০০ পুরনো ও ৩০ নতুন কার্ডধারী মা রয়েছে। প্রতি মাসে ৩৫০ টাকা করে ২৪ মাস অর্থাৎ ২ বছর দেওয়া হবে এ মাতৃত্বকালীন ভাতা। ডেভেলপ অব ট্রেনিং প্রোগ্রাম ইন উইমেন ট্রেনিং সেন্টার (ব্রুটিসি) অ্যাট ডিস্ট্রিক লেভেল এ প্রোগ্রামের আওতায় দুস্থ মহিলা ও পরিবারকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শতকরা ১০ টাকা হারে সুদ দিতে হচ্ছে এ ঋণের ক্ষেত্রে।
পাচার হওয়া উদ্ধারকৃত মেয়েদের ম্যাট-২ এর আওতায় আনা হয়েছে। মেয়েদের ২০ কেজি গম, সার্টিফিকেট, সেলাই মেশিন, শাড়ি ও ১৫ গজ করে কাপড় দেওয়া হয়। যশোরের জেলা পরিষদ থেকে পাচার হওয়া ৫০ জন মেয়েকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। যশোর জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের আওতায় দুস্থ মহিলারা সোনালি দিনের ইঙ্গিত পাচ্ছে। অনেকে ঋণ, ট্রেনিং নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। যশোর জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উদ্যোগে মাসব্যাপী দরিদ্র তরুণীদের টেকসই মোবাইল ফোন মেরামতকরণ কারিগরি শিক্ষা প্রকল্প গত বছর জুলাই মাসে শেষ হয়েছে। সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫০ জন তরুণীকে দেওয়া হয় এ প্রশিক্ষণ। গত ২৭ জুলাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫০ জন তরুণীকে দেওয়া হয় সনদপত্র ও টুলবক্স। এমন নানামুখী কাজ করে চলেছে যশোর জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কাওসার পারভীন বলেন, এ অধিদফতরের উদ্যোগে দরিদ্র মহিলাদের স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে সব সময় আমরা চাই সর্বোচ্চ সাহায্য-সহযোগিতা করতে। বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্র্য রুখতে হবে, তা হলে আমাদের কাজের সফলতা আসবে।