মধুপুরে পাম্প টিউবওয়েলের উদ্ভাবক তারিকুল

ভোরের কাগজ / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য : ২৭/০৫/২০১২অর্থ শিল্প বাণিজ্য ডেস্ক : এক সময়ের দিনমজুর হতদরিদ্র ও বেকার তারিকুল ইসলামের জীবনচিত্র এখন পাল্টে গেছে। দেশের মধ্যে প্রথম ৩ ধরনের আধুনিক পাম্প টিউবয়েল উদ্ভাবন করে খুঁজে পেয়েছেন সুখের ঠিকানা।
প্রথমে তিনি শুরু করেন শ্যালো মেশিনের মেকানিক্যালের কাজ। প্রায় ৫ বছর মেশিনের কাজ করে এলাকাজুড়ে সুনাম অর্জন করেন শ্যালো মেকার হিসেবে। এ কাজ করার পাশাপাশি তারেক চিন্তা করতে থাকেন নতুন কিছু তৈরি করার। তারপর ১৯৮৮ সালে বাড়িতে বসেই শুরু করেন পুরোনো শ্যালো মেশিনের যন্ত্রপাতির ক্রয় করা। শ্যালো মেশিনের পুরোনো লায়নার, রিক্সা-ভ্যানের পুরোনো এক্সএল, বেয়ারিং, পুরোনো লোহার পাইপ, মেশিনের ওয়ারস্যালন প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। লায়নার দিয়ে টিউবয়েলের বডি, রিকশার এক্সেল দিয়ে হাতল, পাইপ দিয়ে টিউবয়েলের গোড়ার অংশ এয়ারগ্যালন দিয়ে উপরের অংশ তৈরি করে ঝালাই দিয়ে বেয়ারিং লাগিয়ে তৈরি করেন টিউবয়েল। খবর বাসসের। প্রথমে নিজের বাড়িতে লাগান নতুন উদ্ভাবিত টিউবয়েল। তার টিউবয়েলের নাম রাখেন ‘তারেক পাম্প’। তারপর ২০০২ সালে তার নিজ গ্রাম ভবানীটেকি চৌরাস্তা মোড়ে খুলে বসেন ছোট আকারের ওয়ার্কশপ।
যে এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই সে এলাকার বিল্ডিংয়ের ছাদের ট্যাংকিতে পানি উঠানোর জন্য তৈরি করেন ‘প্রেসার পাম্প টিউবয়েল’। যতো বেশি প্রেসার দিয়ে টিউবয়েলটি চাপা হবে ততো বেশি ওপরে পানি উঠবে। টিউবয়েলের মুখে রাবারের পাইপ লাগিয়ে হাতলে প্রেসার দিতে থাকলে ১/২শ’ ফুট ওপরে পানি ওঠানো সম্ভব বলে তারেক জানান। এ তিনটি টিউবয়েলেই ১শ ফুট গভীর থেকে পানি ওঠানো যায়। স্থান উঁচু হলেও কোনো সমস্যা নেই। তারেকের এ তিনটি পাম্প টিউবয়েল তৈরির ওয়ার্কশপের নাম দিয়েছেন ‘হাসান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’। তার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ২ জন কর্মচারী মাসিক বেতন হিসেবে কাজ করছে। প্রথমে এলাকায় পাম্প টিউবয়েলগুলো বিক্রি হলেও এখন আশপাশের জেলাগুলোতেও বাড়ছে তারেকের টিউবয়েলের চাহিদা।
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর শহর থেকে ১০ কি:মি: উত্তরে অরণখোলা ইউনিয়নের ভনানীটেকি গ্রামে ১৯৭৫ সালে তারেক জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুস ছামাদ। মায়ের নাম জহুরা বেগম। তারেক জানান, ‘সাধ আছে, সাধ্যের অভাব। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে টিউবয়েল তৈরির উপকরণ ক্রয় করতে পারছি না। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি আমার পাম্পগুলো একটু বেশি পরিমাণে বিক্রি করতে পারতাম তাহলে আমার এগিয়ে যেতে সহজ হতো।’ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তার তৈরি টিউবয়েলগুলো নেয়ার দাবি জানান তিনি।
গত ২০১০ সালের মধুপুর কৃষি মেলায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ‘ডায়াবেটিক পাম্প টিউবয়েল’ দেখে প্রশংসা করেন। তারেক জানান, ‘আমি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্কশপে গিয়ে কাজ করি, ঝালাই মেশিন ও হাতুড়ের আঘাতে তৈরি পাম্প দেখে আমার খুব ভালো লাগে।