জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চলনবিলের লিচু প্রতি দিন কেনা-বেচা হয় অর্ধ কোটি টাকা

চলনবিলাঞ্চলের লিচু বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। লিচুর বাম্পার ফলন  হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে এই অঞ্চলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার লিচু কেনা-বেচা হচ্ছে। এতে করে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে। তাছাড়া অনেকেই আবার বাড়ির আঙিনায় লিচু বাগান করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লিচু রপ্তানি করা হচ্ছে। এবার চলনবিলাঞ্চলে মোজাফ্ফর পুলি জাতের লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি একটানা দুই থেকে তিনদিন ঝড় এবং বৃষ্টিপাত হওয়ায় গাছেই লিচু পচন ধরেছে। এতে করে লিচু মৌসুমের শেষ মুহুর্তে চাষী এবং ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লিচু নিয়ে চলনবিলের কৃষকরা এখন ব্যসত্ম সময় পার করছেন। বাড়ির আঙিনা থেকে ঘর পর্যমত্ম লিচু আর লিচু। তাছাড়া লিচু গাছ থেকে পেরে তা বাজারজাত করার জন্য মহিলাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ এতে জড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার দিন মজুর হিসাবেও কাজ করছেন। আর লিচু নিয়ে গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন স্থানে পাইকারী ও খুচরা হাট-বাজার। তবে লিচু চাষীদের অভিযোগ স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। যে টুকু উৎপাদন হয়েছে তা কৃষকদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে।

স্থানীয়রা জানায়, নাvাটর জেলার মধ্যে গুরম্নদাসপুরের নাজিরপুর এবং সিংড়া উপজেলার চামারী ইউনিয়নের মহিষমারী, চককালিকাপুর, চকবলরামপুর, পাঙ্গাশিয়া, সোনাপুর, রদি চামারী, বাহাদুরপুর, শিবপুর এবং হাতিয়ান্দহ ইউনিয়নের আচলকোট, গুনাইখারা, শালিকা ও হাসিকাটিসহ আরও ৫-৬টি গ্রামে এবার লিচু চাষ হয়েছে। আর এই লিচুগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রামেত্ম প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

চামারীর মহিষমারী গ্রামের লিচু চাষী জোবায়ের হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর দাম বেশী। তবে আবহাওয়া খারাপ ও ঝড় বৃষ্টির কারণে শেষ মুহুর্তে লিচুর গায়ে স্পট পড়ায় ক্ষতিগ্রসত্ম হয়েছে চাষীরা। তিনি আরও বলেন, লিচু চাষ লাভ জনক হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরা অল্প জায়গায় বাগান করে সহজে লাখ প্রতি হতে পারছে। তাছাড়া এই অঞ্চলটি লিচু চাষের জন্য অনুকূল হলেও প্রয়োজণীয় দক্ষতার অভাবে অনেকেই আবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ যদি লিচু চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং সহযোগিতা করে তাহলে আগামীতে এবারের তুলনায় দ্বিগুন জমিতে লিচু চাষ হবে।

চলনবিলাঞ্চলের প্রায় দশটি লিচু বাগান এবার ক্রয় করেছেন পুঠিয়ার ঝলমলিয়া গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ। তিনি ১৯৮৬সাল থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে লিচুর বাগান ক্রয় করে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। এবারে তিনি মৌসুমের শুরম্নতেই প্রায় ৮লÿ টাকা দিয়ে এই বাগানগুলি ক্রয় করেছিলেন। নিয়মিত কীটনাশক আর আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু ব্যবসায়ী মজিদ ওই বাগানগগুলো  থেকে তুলনামূলক লাভ কম হবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও সেচ সমস্যার কারণে লিচু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষীরা। তাছাড়া দেশের কীটনাশক কোম্পানীগুলো ভগিজগি এবং কৃষি অফিসের কোন সহযোগিতা পাননি।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার প্রায় ৭১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সিংড়ায় ৭০হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মঞ্জুরম্নল হক বলেন, এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে মোজাফ্ফর পুলি জাতের লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে বলেন, চাষীদের সহযোগিতার জন্য আমরা সব সময়ই প্রস্ত্তত। তবে চাষীদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি।