বাংলা কলা, চাম্পা কলা, আনাচি কলা ও সাগর কলার সম্ভার বান্দরবানে। কলার বাম্পার ফলন আদিবাসী-বাঙালি কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।সাবলম্বী হয়েছেন কলা চাষী। স্বল্প মেয়াদী ও লাভজনক এই কলা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। জুম চাষ বিকল্প হিসেবে কলা চাষে পাহাড়ে আদিবাসী কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। বান্দরবানসহ রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি পাহাড়ি জেলার আবহওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলে কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছেন। বান্দরবানে ৭টি উপজেলা রুমা, থানছি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম, রোয়াংছড়ি ও সদর উপজেলার আদিবাসী গ্রামগুলোর আশে পাশে ব্যাপক কলার চাষ হয়েছে।
সারা দেশে বাংলা কলার কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বান্দরবানে সাপ্তাহিক বাজার দিনে আদিবাসী কৃষকরা বাজারে নিয়ে আসেন বাংলা, চাম্পা কলা, আনাচি কলা ও সাগর কলার ছড়ি। কলার বাম্পার ফলন ও হয়েছে এই বছরে। সাপ্তাহিক রোববার ও বুধবার বাজার দিনে আদিবাসীদের কলার ছড়িতে সয়লাব হয়ে যায় বান্দরবানে। কলার ছড়ি বিক্রেতা ও থোয়াই গ্য পাড়ার কৃষক হ্লাচিংমং মারমা জানান, বাজারে বাংলা কলা ও চাম্পা কলার ছড়ি বিক্রি করে ২হাজার টাকা পেয়েছেন। কলা ছড়ির দামও ভাল পেয়েছেন।
বাড়ির আশে পাশে ১৫০টি কলার গাছ লাগানোর ১বছর পরে কলার ছড়ি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। বাঘমারা এলাকার কৃষক ক্যচিং মারমা জানান, তার ২হেক্টর জমিতে কলা চাষ করে অনেকটা সাবলম্বী হয়েছেন। স্বল্প মেয়াদী ও লাভজনক কলা চাষ করে সংসারে ভরণ পোষণ করার পর তার ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ চালাতে কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি। এদিকে বাজারে কলার পাইকারি ব্যবসায়ী মো ইউছুপ জানান, বান্দরবান থেকে আদিবাসীদের কলা পাইকারি দরে ক্রয় করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। এতে তার প্রচুর মুনাফা থাকে। বাংলা কলার বাম্পার ফলন হয়েছে বান্দরবানে। প্রতিটি বড় কলা ছড়ির দাম ১৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় ক্রয় করে অধিক মুনাফায় বিক্রি হয়। এতে কৃষক এবং পাইকারি ব্যবসায়ীর উভয়ের মধ্যে লাভ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, বান্দরবান জেলার রুমা, থানছি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও সদর উপজেলায় মোট সাড়ে ৭হাজার হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে এবছর। আর উৎপাদন হয়েছে ৬৭ হাজার মেট্রিকটন। কলা চারা রোপনের ১ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে। বছরের সব ঋতুতে কলার ছড়ি পাওয়া যায়। এতে কৃষকদের অধিক মুনাফা অর্জন হয়।
কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল কালাম বলেন, পাহাড়ে জুম চাষ বিকল্প ও পরিবেশ বান্ধব কলা চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বান্দরবানে কলার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরাও মহা খুশি। বান্দরবানে উৎপাদিত কলা স্থানীয় ভাবে চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে আদিবাসী কৃষকরা সাবলম্বী হয়েছেন বলে জানান।