বাপেক্সঃ মেইড ইন বাংলাদেশ

সুনেত্র-সুন্দলপুরসহ নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এখন আলোচনায়। আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া একটি দেশের জন্য এই আবিষ্কার শুধু বিরাট সাফল্যই নয়, বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও বড় ধাক্কা। অনেক কম খরচে এবং নিরাপদে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান করে বাপেক্স পুরনো একটি প্রশ্ন আবার সামনে নিয়ে এসেছে_আমাদের এদেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়েই কি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়? লিখেছেন সাদাত হাসান নিলয়
১৯৮৯ সালে বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এঙ্প্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কম্পানি লিমিটেড) জন্ম। পেট্রোবাংলা বা বাংলাদেশ অয়েল-গ্যাস ও মিনারেল করপোরেশনের অনুসন্ধান ডিরেক্টরেটকে আলাদা করে নাম রাখা হয় বাপেক্স কিন্তু শুরুতেই এটি উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল না। শুরুতে কাজ ছিল ভূগর্ভস্থ প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান করা। ২০০০ সালে এটিকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি অবহেলার শিকার হয়_দীর্ঘ সময় প্রয়োজনীয় তহবিলই পায়নি। কাজ হয়েছে ৩০-৪০ বছরের পুরনো রিগ (খননযন্ত্র) দিয়ে। ফলে নিজেদের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে গিয়েছে বিদেশি কম্পানি। এসবের মধ্যেই দেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র সুনেত্র আবিষ্কার করল বাপেক্স ।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বাপেক্স ওয়েবসাইটে বলা আছে, ‘আমাদের কর্মীরা নিয়োজিত আছে বিভিন্ন বিশেষায়িত ক্ষেত্রে। এগুলো হচ্ছে_ভূতাত্তি্বক ও ভূসাংগঠনিক বিশ্লেষণ, বেসিন অ্যানালাইসিস, সম্ভাবনা যাচাই, অনুসন্ধান ও উত্তোলন, কূপ উন্নয়ন ও গবেষণাগারে পরীক্ষণ। এসবই হাইড্রোকার্বন জাতীয় পদার্থ উন্নয়ন ও উত্তোলনের জন্য আবশ্যক।

সাম্প্রতিক সাফল্য
সুনেত্র : সুনামগঞ্জ (ধরমপাশা) ও নেত্রকোনা (মদন) জেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্র। ক্ষেত্রটি খুঁজে পাওয়া গেছে সিসমিক সার্ভের মাধ্যমে। ক্ষেত্রটির অধিকাংশই ১২ নম্বর ব্লকের মাঝে যা আগে ইউনোকল বা অডন্টালের আওতাধীন ছিল। তারা এই বিশাল গ্যাসভাণ্ডার আবিষ্কার করতে পারেনি, হয়তো উদ্যোগই ছিল না। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ বলেন, ‘সুনেত্রকে আমরা একটি প্রথম সারির সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করছি। আজ পর্যন্ত সুরমা বেসিনের পূর্বপ্রান্ত বরাবর বহুসংখ্যক বৃহৎ ও মাঝারি আকারের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে; অথচ একই বেসিনের পশ্চিমপ্রান্তেই ছিল সুনেত্র। আমরা জরুরি ভিত্তিতে সুনেত্রয়ে অনুসন্ধান কূপ খনন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী বছরই তা সম্ভব হবে। ধারণা করছি, সুনেত্র টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট) মাত্রার গ্যাসক্ষেত্র।’

রশিদপুর : সিলেটের রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র এলাকায় ত্রিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে চালিয়ে বাপেঙ্ অতিরিক্ত এক টিসিএফ গ্যাস মজুদ শনাক্ত করেছে। প্রায় ৩২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হয়।

সুন্দলপুর : দ্বিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে চালিয়ে নোয়াখালীর সুন্দলপুরে একটি গ্যসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে বাপেঙ্। এক হাজার ৪০০ ফুট গভীরতায় অনুসন্ধানকূপ খনন করে গ্যাস পাওয়া গেছে, যেখানে সাধারণত দুই হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ফুট গভীরে খনন করতে হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এ কূপ থেকে দৈনিক প্রায় ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হবে।
এ ছাড়া বাপেঙ্ বিজিসিএলের পাঁচটি কূপ খননে সহায়তা করেছে। আবিষ্কার করেছে নরসিংদী, মেঘনা, শাহবাজপুর, সালদা নদী গ্যাসক্ষেত্র। কূপও খনন করেছে সাফল্যের সঙ্গে। এ ছাড়া বাপেঙ্ কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোকে ত্রিমাত্রিক সিসমিক সার্ভের কাজে সহায়তা প্রদান করে। যার ফলে ছাতক ও ফেনীতে গ্যাস মজুদ পাওয়া যায়। ফেনীতে গ্যাসকূপও খনন করে দেয়।

বন্ধু নাই
এখন বাপেঙ্রে পাঁচটি রিগ আছে। এর মধ্যে তিনটি ৪০ বছর আগে কেনা। নতুন দুটি দিয়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কূপ খনন সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর বললেন, ‘সম্প্রতি আমরা ২০০ কোটি টাকা দিয়ে একটি আধুনিক গভীর কূপ খননক্ষম রিগ ক্রয় করেছি এবং ইতিমধ্যেই তা ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে স্থাপন করা হয়েছে। আরো দুটি নতুন খনন রিগ আগামী বছর চলে আসবে। এ মুহূর্তে চারটি রিগ একসঙ্গে খননকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দুই বছরে পাঁচটি অনুসন্ধানকূপ খননের পরিকল্পনা আছে আমাদের। এর আগে এত সক্রিয়তা বাপেঙ্রে ছিল না। এখন থেকে আমরা প্রতিবছর দুই বা তিনটি অনুসন্ধানকূপ খনন করব।’