জামানত ছাড়াই ঋণ পাবেন নারী উদ্যোক্তারা

যেসব নারী উদ্যোক্তা জামানতের অভাবে ব্যাংকঋণ পান না, তাদের জন্য জামানত নিশ্চয়তা তহবিল (ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড) গঠন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সংক্রান্ত দুটি তহবিল গঠনে সহায়তা দেবে সুইডস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সিডা) ও ইউনাইটেড ন্যাশন ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইউএনসিডিএফ)। এর মধ্যে সিডা দেবে দেড় কোটি ডলার বা ১২০ কোটি টাকা ও ইউএনডিএফ দেবে ১ লাখ ডলার বা ৮০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই ইউএনসিডিএফের তহবিল পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। শীঘ্রই সিডার তহবিলও পাওয়া যাবে। এ দুটি তহবিলই বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ।

জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৯ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছে। যার মধ্যে ১৭ শতাংশই নারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের তহবিল নারীদের ব্যাংকঋণ পেতে সহজলভ্য করবে। যা নারীদের অর্থনৈতিক মূলধারায় অধিকহারে সম্পৃক্ত করবে। এতে নারীর ক্ষমতায়নও বাড়বে।

সূত্র বলছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম রয়েছে। প্রতিটি তহবিল থেকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ন্যূনতম ১৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব তহবিল থেকে নারীদের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া এসব তহবিল থেকে নারীদের ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে বিবেচনায় নিয়ে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে গ্রুপ জামানত বা সামাজিক জামানত গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংকই এই নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দিতে চায় না। তারা সিকিউরিটি ও গ্যারান্টার চায়। এক্ষেত্রে জমি, ফ্ল্যাট কিংবা ব্যাংকে রাখা এফডিআর সিকিউরিটি হিসেবে নেয়া হয়। পাশাপাশি গ্যারান্টার হিসেবে নিজের স্বামী বা আত্মীয় স্বজনের সই নেয়া হয়। সাধারণত একজন উদ্যোক্তাকে যতটা ঋণ দেয়া হয় তার বিপরীতে শতভাগের বেশি সিকিউরিটি দাখিল করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ সিকিউরিটি হয় ১১০ শতাংশ। তবে বেশিরভাগ ব্যাংকই ১৫০ থেকে ১৮০ শতাংশ পর্যন্ত সিকিউরিটি চায়। কিন্তু বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সিকিউরিটির এই শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয় না। ফলে ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যেতে পারছেন না। বিষয়টি অনুধাবন করেই এ সংক্রান্ত তহবিল গঠনে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় বলেন, যেসব নারীরা সিকিউরিটির অভাবে ব্যাংকঋণ থেকে বঞ্চিত হন, তাদের উৎসাহেই এ ধরনের তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এটি হলে নারীদের ব্যাংকঋণ পাওয়া সহজ হবে, কমবে ভোগান্তি।

জানা গেছে, এ তহবিলের গ্যারান্টি সুবিধা নিতে আগ্রহী ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। কেবল নতুন নারী উদ্যোক্তারা চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আবেদন করবেন। এক্ষেত্রে নতুন নারী উদ্যোক্তা বলতে সেসব উদ্যোক্তাকে বুঝাবে, পূর্বে অন্য কোন ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং যারা পূর্বে ব্যবসায়িক কাজে কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ গ্রহণ করেননি। এছাড়া একজন নারী উদ্যোক্তাকে যে পরিমাণ ঋণ দেয়া হবে তার জন্য যে পরিমাণ সিকিউরিটি মানির দরকার হবে, সেই পরিমাণ কভারেজ পাওয়া যাবে এ তহবিল থেকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোকে তার প্রদত্ত ঋণের সিকিউরিটি মানির ৫০ শতাংশ কভারেজ দেয়ার চিন্তা করছে। বাকি ৫০ শতাংশ কভারেজ ব্যাংকগুলোর নিজেদেরই বহন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা যায়, এ তহবিল গ্যারান্টি তখনই পাওয়া যাবে, যখন প্রদত্ত ঋণটি মন্দমানের খেলাপিঋণে পরিণত হওয়ার পর ন্যূনতম ৬ মাস অতিক্রান্ত হবে।