বাংলাদেশের অগ্রগতি অন্যদেরও পথ দেখাবে

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতি অন্য দেশকেও পথ দেখাবে বলে মনে করছেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্য দেশও সুফল পাবে বলে আমি আশা করি। দারিদ্র্য বিমোচন দিবস উপলক্ষে গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার কাছ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী উদ্যোগের প্রশংসা দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পরে এক গণবক্তৃতা অনুষ্ঠানেও বিশেষ অতিথির বক্তব?্য দেন কিম। এ সময় দারিদ্র্য বিমোচনে বৈশ্বিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, মাত্র এক বছরের মধ্যে পৃথিবীতে ১০ কোটি মানুষকে অতিদারিদ্র্য থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে।বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি) বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার যেখানে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় তা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে।বাংলাদেশের এ অর্জনকে ‘চমৎকার’ হিসেবে বর্ণনা করে কিম বলেন, এই অভিজ্ঞতা অন্য দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। বিশ্বব্যাংক প্রধান বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য উদ্ভাবনী ধারণার প্রবর্তন যে খুবই জরুরি, তা বাংলাদেশ খুবই দ্রুত অনুধাবন করতে পেরেছে।এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের দল গড়ে তুলে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার কথা স্মরণ করেন কিম। তিনি বলেন, জনগণের পেছনে বিনিয়োগ করা ঠিক ততটাই জরুরি, যতটা জরুরি অবকাঠামো ক্ষেত্রের বিনিয়োগ। অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সেই বিনিয়োগ বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা গত ৪৫ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনগুলো তুলে ধরেন এবং আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দেয়া প্রতিশ্রুতি আর টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণের অঙ্গীকার ভুলে যাবে না। বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মধ?্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় এ অনুষ্ঠানেও তিনি তুলে ধরেন।অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পল রোমার বলেন, এমনিতে অর্থনীতিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ‘খুব বেশি জরুরি না হলেও’ বাংলাদেশের মতো দেশের পরিস্থিতি তেমন নয়। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে রোমার শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি মনে করিয়ে দেন, শিক্ষর মানটাই হলো আসল।সমাজে সাম্যসা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এর কোন বিকল্প নেই। দারিদ্র্য বিমোচনে দ্রুত উদে?্যাগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে রোমার বলেন, এক্ষেত্রে এক দিনের বিলম্বও অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে।বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিঙ্ন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ?্য বাস্তবায়নে সাফলে?্যর কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।এর আগে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেন কিম। সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এছাড়া ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। বঙ্গবন্ধুর নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এরপর জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে থাকা নানা নিদর্শন দেখছেন জিম ইয়ং কিম। জাদুঘরে জিম ইয়ং কিমকে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুর নাতি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে জাদুঘর ঘুরে দেখেন কিম। এ সময় দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষরও করেন তিনি।