২ ঘণ্টায় ৮০০ টিকেট বিক্রি: নভ-নোভার রাজকীয় বিয়ে

রংবেরংয়ের বেলুন, ফেস্টুন, ব্যানার, জরিতে জমকালো সাজে সেজেছে বিয়েবাড়ি। ভিআইপি অতিথির ভিড়। মুহুর্মুহু ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ। আলোর ঝলকানি। বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে ‘লাইভ’ সম্প্রচার। কিছুরই কমতি ছিল না চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সিংহী নোভা আর রংপুর চিড়িয়াখানার সিংহ বাদশার (নতুন নাম ‘নভ’) বিয়েতে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় রাজকীয়ভাবে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। গতকাল বেলা ১১টায় ফয়’স লেকের চিড়িয়াখানায় অনুষ্ঠিত ওই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে সকাল থেকে কৌতূহলী মানুষের ভিড় ছিল। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮০০ টিকেট। এর বাইরে শতাধিক তিন বছরের কম বয়সী শিশু ছিল বিনা টিকেটের দর্শক। বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক আর চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতরা তো ছিলেনই। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের রীতি অনুযায়ী ঘাটা ধরে (বিয়ের গেট ধরে) ৩ হাজার ১ টাকা পেয়েছেন তিন নারী সাংবাদিক লতিফা রুনা, শাহেদা পিয়া ও শিলা। সিংহের খাঁচায়
ভালোবাসার প্রতীকে সাজানো মাংস-কেকটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪৭ কেজি মাংস। যার মধ্যে ছিল প্রচুর গরুর কলিজা, ফুসফুস, হূিপণ্ড, মাংস, দুটি আস্ত মুরগিসহ সিংহের প্রিয় সব পদ। বিশাল কেকটি কাটেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন ও তার মেয়ে মাশিয়াত মুবাশ্বিরা।
এর আগে বিয়ের স্মারক হিসেবে ওড়ানো হয় বেলুন। এ সময় জেলা প্রশাসকের স্ত্রী ইশরাত জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) হাবিবুর রহমান, জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল, কবি অভীক ওসমান ও সেলিনা শেলী, চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন, ডেপুটি কিউরেটর চৌধুরী মো. মনজুর মোরশেদ, প্রাণী চিকিত্সক শাহাদাত হোসেন শুভ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামবাসীর জন্য এই চিড়িয়াখানা বিনোদনের প্রধানতম মাধ্যম। এখানকার দর্শকদের প্রত্যাশা বেশি। এতদিন সিংহী ছিল দুটি। একটি রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে বদল করে এখানে সিংহ নিয়ে এসেছি। যাতে তারা প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করতে পারে। একই সঙ্গে দর্শকদের জন্য আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হবে।
বিয়ে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি হচ্ছে তাদের একসঙ্গে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। একই সঙ্গে দেশবাসীকে প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
জেলা প্রশাসকের আড়াই বছর মেয়াদে চিড়িয়াখানায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৪৪ লাখ টাকা দিয়ে সীমানা প্রাচীর, সিঁড়ি নির্মাণসহ প্রচুর কাজ হয়েছে। পশুপাখির খাঁচাগুলো মেরামত করা হয়েছে। নতুন ফটক নির্মিত হয়েছে। দীর্ঘদিনের আবর্জনা পরিষ্কার করে পুরো এলাকাটি দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। এ ধারাবাহিতা অব্যাহত থাকবে।
বিয়ের আগে জিপিএইচ ইস্পাতের সৌজন্যে নির্মিত চিড়িয়াখানার নতুন ফটক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে সিংহ-সিংহীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বাদশার নাম পরিবর্তন করে নোভার সঙ্গে মিল রেখে জেলা প্রশাসক ‘নভ’ রেখেছেন। যার অর্থ আকাশ। আশা করি নভ এবং নোভার সংসারজীবন সুখের হবে। ২৪ ঘণ্টা পরই তাদের এক খাঁচায় মিলনের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৬ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নিয়েছিল সিংহ শাবক ‘বর্ষা’ ও ‘নোভা’। দুই বোনের জন্মের কিছুদিন পর তাদের মা ‘লক্ষ্মী’ এবং ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাবা ‘রাজ’ মারা যায়। এরপর আর কোনো নতুন সিংহ চিড়িয়াখানায় আনা হয়নি। একই সঙ্গে চিড়িয়াখানায় আর কোনো পুরুষ সিংহ না থাকায় ‘বর্ষা’ ও ‘নোভা’ কুমারী থেকে যায়। তাদের ঘর-সংসার করাও হয়ে ওঠেনি।
এতদিন অনেক খোঁজখবর করেও উপযুক্ত পুরুষ সিংহ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি সংবাদপত্রের মাধ্যমে রংপুর চিড়িয়াখানায় দুটি পুরুষ সিংহ থাকার খবর পায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর বর্ষা ও নোভার মধ্য থেকে একটি রংপুর চিড়িয়াখানার সঙ্গে অদলবদল করার ব্যাপারে আলোচনার ভিত্তিতে সমঝোতায় উপনীত হলে বর্ষাকে গত ২৮ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ‘রাজা’র সঙ্গী হবে বর্ষা। নোভার জন্য নিয়ে আসা হয় রাজার ভাই বাদশাকে।